বেশ অনেক দিন পর লিখছি। কাজের ফাঁকে একাধিক ভাষায় লেখা কঠিন, সময় হয়ে উঠে না। আজ একটা বিষয় হঠাৎ খুব নাড়া দিল। তাই, ভাবলাম দু’লাইন লিখেই ফেলি।
টিভিতে বাংলাদেশ আর নিউজিল্যানড এর ক্রিকেট খেলা চলছে। খেলছে দু দেশের মেয়েরা। কিউই মেয়েরা নিঃশংকোচে ব্যাটিং করে গেলো। যতটা পারে রান করল। কোন ভয় ডর চোখে পড়ল না। এরপর নামলো বাঙালি মেয়েরা। অনেক শংকা তাদের শরীরের ভাষায়, খুব সাবধানে তারা একের পর এক বল খেলে গেলো। আউটও হল। অবাক হয়ে ভাবছিলাম, কিসের এতো ভয় ওদের। আউট তো হচ্ছেই, একটু নাহয় খেলেই আউট হোক। হঠাৎ পাশে বসা আরও বাঙ্গালিদের মন্তব্য কানে এলো। কেউ একজন বলছে, “কিউই মেয়ে গুলো কি সুন্দর, আমাদের মেয়েগুলো সব কালা-কুলা।” মাথায় চিন্তা খেলে গেলো। ভাবলাম, চেহারা আসে মূলত জন্ম সূত্রে; সেই চেহারার ব্যাপারেই যদি আমরা এতো অসহিষ্ণু হই, তাহলে কাজ – যা আমাদের চেষ্টার ওপর নির্ভর করে তার ব্যাপারে আমরা কতটুকু সহিষ্ণু হতে পারবো?
সহজ করে বলি। একজন কিউই যখন খেলে, তখন তারা জানে যে তাদের দর্শকেরা, বিশেষ করে দেশি দর্শক, তাদের চেষ্টাকে সম্মান করবে এবং ফলাফল যাই হোক ভালো চেষ্টা চালিয়ে যেতে বলবে। এটা তাদের নুন্যতম প্রত্যাশা এবং তারা জানে যে শত ভাগ না হলেও মূলত তাই হবে । একজন বাঙালি যখন খেলে, তারা জানে খেলা দেখে তার পরিচিত মহল থেকে কতটা অসহিষ্ণু কঠোর সমালোচনা আসতে পারে। শুধু মাত্র চূড়ান্ত জয়ই তাদের এ থেকে রক্ষার পথ। এরকম মানসিক চাপে ভালো খেলা তো দূরে থাকুক, খেলা চালু রাখাই কঠিন।
ভাবছেন, বিদেশে খেলার মাঠে কে আবার বাঙালি মেয়েদের কঠোর সমালোচনা করবে! ভেবে দেখুন, জন্মের পর থেকে অদ্যাবধি যে অসহিষ্ণু কঠোর সমালচনায় ব্যতিব্যাস্ত থেকেছে, তার তো সমালোচনা এখন নিজের মাথার ভেতর। সাইকলজির ভাষায়, সে এভাবে কন্ডিশনড। তাই যা কিছুই সে ঐ কনডিশনিং থাকা অবস্থায় করবে, সবই প্রভাবিত হবে ঐ একই মানসিকতায়, ফলে করুন হবে সে দৃশ্য, কোন সন্দেহ নাই।
আমি নারি বা পুরুষ বাদি নই। এখানে মেয়েদের দুর্দশা আলাদা করে তুলে ধরতে আমি লিখছিনা। লিখছি আমাদের দুর্দশা, অর্থাৎ বাঙ্গালিদের দুর্দশা তুলে ধরতে, তাও আবার নিজেদের অত্যাচারের ফলে। সময়ের সাথে পদে পদে ধিক্কার আর নিরুতসাহিত করার যে অভ্যাস গড়ে তুলেছি তা জাতিগত ভাবে আমাদের ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। প্রতি পদে পদে উৎসাহ আর সময় মতো গঠনমুলক সমালোচনা এনে দিতে পারে প্রকৃত উন্নতি। অথচ আমরা, বাঙ্গালিরা পদে পদে সমালোচনা আর কালে ভদ্রে উৎসাহ দেবার যে সংস্কৃতি গড়ে তুলেছি তা আমাদের সমাজে উন্নতির পরিবেশ গড়ে উঠতে দেয় না।
তাই আমিও সমালোচনা সীমিত রেখে বলব, আসুন, আমাদের মনের ভাষা সুন্দর করি। যে কোন দৃশ্যে সুন্দরটাকে বড় করে দেখি। সব পরাজয়ের উদ্দেশ্যই যে জয় সেটাও মাথায় রাখি। সবচেয়ে বড় কথা যারা কষ্ট করে খেলছে, তারাই জয় বা পরাজয় পায়, অন্যরা নয়। আর কিছু না হোক, নিজের মন, চিন্তা, সত্ত্বাকে সুন্দর আর পরিছন্ন রাখতে নেতিবাচক চিন্তা আর কথা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলি। দেখবেন, এই সুঅভ্যাসে অন্যের চেয়ে আমরাই বেশি লাভবান হব।
Reblogged this on ত্রিভুজ.
LikeLike
correct
LikeLike